ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

শাহপরীর দ্বীপে লাশ নিয়ে ৪কি:মি: হেটে বাড়ি পৌছল স্বজনরা

জসিম মাহমুদ, টেকনাফ থেকে :

দেশের সর্ব দক্ষিণে সীমান্তের নাম ছিল শাহপরীরদ্বীপ। নামে দ্বীপ হলেও এটি টেকনাফের মুল ভূ-খন্ডের সাথে সংযুক্ত ছিল। কিন্তু এখন আর তার অস্থিত্ব নেই। ওটি বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ রূপে নামের সার্থকতায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। একই সঙ্গে সাগরের আগ্রাসনের কবলে দ্বীপটি পাঁচ-চর্তুাংশ বিলীন হয়ে একটি অংশ ঠিকে আছে কোন রকম। টানা ৪ বছরের টানা ভোগান্তির কারণে এ শাহপরীরদ্বীপের মানুষ মনে করছেন তারা অভিশপ্ত মানুষ। তাদের কোন অভিভাবক নেই। তাদের অনেকেই প্রশ্ন করেন তারা বাংলাদেশের নাগরিক কিনা?

স্বাধীনতার আগে শাহপরীর দ্বীপের আয়তন ছিল দৈর্ঘ্য ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১০ কিলোমিটার। বর্তমানে তা ছোট হয়ে দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটার ও প্রস্থ ২কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। আর এ ছোট্ট হওয়ার নেপথত্যে টানা ৪ বছরের ভোগান্তির কথা বলেছেন শাহপরীর দ্বীপের মানুষ।টানা ৪ বছর ধরে জনপ্রতিনিধিদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন দ্বীপের মানুষ। হয়নি বেড়িবাঁধ আর হয়নি সড়কের সংস্কারও। তিনি অভিমত দেন যে সড়কটি রয়েছে ওই সড়কটি যদি কয়েক ফুট  উচু করে সংস্কার করা হতো তবে তাদের ভোগান্তি কমতো। এখন জোয়ারের সময় ছোট্ট বোট, ডিঙ্গি নৌকায় টেকনাফের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। আর ভাটা মানে ৪ কিলোমিটার কাদা ও জরাজীর্ণ সড়কে পায়ে হাঁটার ভোগান্তি।

কিছু দিন আগে শাহ পরীর দ্বীপ এর মুরব্বী হাজি দলিলুর রহমান শরীলে খারাপ লাগায় সকালে ঘুম থেকে উঠে ডা: দেখানোর জন্য টেকনাফের উদ্দেশ্য রওনা দেন।ঘাটে গিয়ে দেখে ভাটা জোয়ারের পানি না থাকায় ৪ কি: মি:পায়ে হেটে হারিয়া খালি পৌছার পর তার অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় খুব দ্রুত সি,এন.জি তে করে টেকনাফ হাসপাতালে পৌছলে কর্মরত ডাক্তার তাকে মৃত্য ঘোষনা করেন।তার পর লাশ নিয়ে হারিয়া খালি পৌছার পর দেখা যায় জোয়ারে পানি নাই।জোয়ারের পানি আসতে দেরি হওয়ায় লাশ নিয়ে ৪কি:মি:হেটে বাড়ি পৌছল স্বজনরা।গত ৬ মাসে তিনটি শিশুকে হাসপাতালে নিতে গিয়ে কাদা ও জরাজীর্ণ সড়কটি অতিক্রম করতে পারিনি। মৃত সন্তান নিয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছে পিতা মাতাকে। তবু যেন কারো দৃষ্টি পাওয়া যাচ্ছে না। কাদা ও জরাজীর্ণ সড়ক অতিক্রম করা কালে দেখা মিলে মিস্ত্রী পাড়ার কুলসুমা নামের এক নারীর। তিনি বলেন, তারা সম্ভবত অভিশপ্ত মানুষ। তাদের বোমা মেরে হত্যা করা যেতে পারে। এতে দ্বীপের মানুষের ভোগান্তি কমবে। তাদের কাছে বেঁচে থাকা মানেই ভোগান্তি।

শাহপরীর দ্বীপ ৯ নং ওয়াডের নবর্বাচিত মেম্বার ফজলুল হক বলেন ৪ বছর আগে শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিম অংশে বেঁড়িবাধের সামান্য অংশ সাগরে ঢেউতে ভেঙ্গে যায়। আর ওই ছোট্ট অংশ সংস্কার না করায় এখন দ্বীপটি মুল-ভূখন্ডের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন দ্বীপটিতে বেড়িবাঁধের অস্থিত্ব পাওয়া যাবে না। জোয়ার মানেই পানি-পানিতে সয়লাভ পুরো দ্বীপ। দ্বীপের গ্রাম সংখ্যা ছিল ১৩ টি তা এখন দাড়ায় ১০টি গ্রামে ৩টি গ্রাম সাগরে তলিয়ে যায় বাকি ১০ গ্রামের  ৪০ হাজার মানুষ থাকেন পানি বন্দি। অথচ এ শাহপরীরদ্বীপে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ছিল। এখন ওই সড়কটি জোয়ারের সময় দেখা যাবে না। ভাটা হলে জরাজীর্ণ সড়কের দেখা মিলে।

৮নং ওয়াডে নবনিবাচিত মেম্বার ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম রেজু এ ভোগান্তি দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, দ্বীপটি অস্থিত্ব সংকট চরমে। আগামী বষা আগে বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করলে দ্বীপটি অস্থিত্ব ও না থাকতে পারে, এ পরিস্থিতিতে জরুরীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ জরুরী।

 

উত্তর পাড়ার এক বাসিন্দা প্রশ্ন করেন তিনি কোন রাষ্ট্রের বাসিন্দা। আর বাংলাদেশের বাসিন্দা হলে ৪ বছরেও তাদের র্দূভোগ নিয়ন্ত্রণে কোন কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হল না কেন। অথচ জনপ্রতিনিধিরা তো কোন না কোনভাবে ওখানে গেছেন এবং তাদের রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ৪ বছরেও কেউ তো কথা রাখলো না। ৭নং ওয়াড়ে মেম্বার নুরুল আমিন বলেন গত ২ বছর ধরে রিং বাধের জন্য সরকারি ভাবে  প্রচুর বরাদ্দ দিলে ও কাজ শেষ হবার এক সপ্তাহ আগে টাকা শেষ হয়ে যায় অল্প কাজের জন্য রিং বাধের পুরাতন কাজ নতুন হয়ে দাড়ায়।অথচ কেবল আশার কথাই শুনা গেল সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেকনাফের দায়িত্বরত উপ-সহকারি প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন জানান, টেকনাফের ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধের জন্য ১০৬ কোটি টাকার চেয়ে মন্ত্রণালয়ের পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ নিমার্ণ করা হবে।

 

পাঠকের মতামত: